সুন্দর ছিলে তুমি। অনেক সুন্দর। খাওয়ার পর যখন তোমার ঠোট লাল হতো তখন পুরোনো দিনের দাদিমাদের মতো পানের রঙে রাঙানো ঠোটের মতো মনে হতো, আর এখনকার ভাষায় সে রাঙা ঠোট আবেদনময়ী ছিল ঠিকই, ভূলে থাকাটা অনেক কঠিন করে দিয়েছ তুমি। তোমাকে ভাবিনা আমি এটা কি তুমি ভাবো? পারো তুমি.. কিভাবে? কিভাবে পারো তুমি?বুঝলাম তুমি ভূলে গিয়ে নিজেকে বদলাতে চাইছ। কি? ঠিক বলেছিনা? কিন্তু ভূলে যেয়ে তুমি অনেক ভালো থাকলেও সেদিন তোমার কথামতোইতো আমিও শপথ করেছিলাম তোমার পাশে আমি থাকবো আজীবন। কি? ভূলে গেছ সেদিনের কথা? নতুন জীবনের সন্ধানের জন্য পুরোনো জীবনকে ভূলে যেতে হবে এটা কোন ধরনের দর্শন তোমার? তোমার দর্শনের শিক্ষা তোমাকে শুধু নিরপরাধ সেজে জীবন গড়ার শিক্ষা দিয়েছে, দায়বদ্ধতাকে সাথে নিয়ে জীবন চালাতে তোমার দর্শনই ধর্ষিত হয়েছে হাজারো স্মৃতির কাতারে। তুমি তাও বোঝোনি.. তাইনা? যাক, তোমাকে আর কি বলবো? আমি আমার মায়ের দেয়া আমার জন্মকে যেমন আমি আর ফিরিয়ে দিতে পারবোনা, সুতরাং তোমার কাছ থেকে স্মৃতিগুলো ফেরত চাওয়া আমার জন্য নিতান্তই বোকামী।
ভালবাসার জন্ম যেখানে তুমিই শেখালে, তুমিও শেখালে কিভাবে সবকিছু শেষ করে দিয়ে, সবকিছু ভুলে গিয়ে জীবন বদলাতে হয়। কিন্তু আমি বাবা অনেক আগে থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলামনা তাই তোমার এই শিক্ষাটা শিখতে পারিনাই। নিজেকে জয়ী ভেবে সবকিছু যদি সমীকরণের জালে ফেলে দিতে চাও তাহলেও আমার আর কিছু বলার নেই কারণ গণিতে আমি বরাবরই কাচা। তা না হলে হিসাব বুঝে নিতে পারতাম। সীমানার ওপারে যখন সব স্মৃতিকে রেখে দিয়েছ তাহলে ফেলে দাওনা আমার স্পর্শ, কেটে ফেলে দাও আমার স্পর্শিত শরীর। ভালো লাগেনা। তুমিই শেখাও তুমিই শুধরাও। তোমার গন্ডিতে আমি এখনো নিজেকে আটকে রেখেছি, শেষ বিন্দু পর্যন্ত তাই-ই হবে। কিন্তু কেন? জানি বৃহৎ সুখের পিছনে চলা তোমার একটা মোহ। আমার দেয়া অতি নগন্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সুখে ?তা? দিয়ে দেখেছিলে? এটাও বংশ বিস্তার করে বৃহৎ সুখ দিতে পারতো হয়তবা। মরচে ধরা ঘুনে পাতায় তেল দিয়ে সেটার স্বাদ বৃদ্ধি করাটা হয়ত তোমার দর্শনের শিক্ষা, কিন্তু আমার দর্শন অনেক নমনীয়। আমার দর্শন মাথা নোয়াতে শিক্ষা দিয়েছে। স্মৃতিরা সব বিস্মৃতিতে রয়ে গেছে তাইনা? কিন্তু আমি ঠিকই পুজো করে চলেছি। বিশ্বাস আমার অনড়, সাহস আমার সাথেই থাকে, স্বপ্ন নিয়মিত জন্ম হয়, গতি ক্রমে বেড়েই চলেছে, দিগ্বিদিক চিনেছি অনেক। পালাবে কোথায়? আমার বিশ্বাস তোমাকে বেধে রাখার জন্যই যথেষ্ট। মানবীক ভালবাসার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। কাচের ভেতর দিয়ে, প্রাসাদে বাস করে বাইরের উলঙ্গ পৃথিবীকে দেখার চেষ্টা বৃথা-ই বটে। দেরী হয়নি এখনো.. সময় বাকী আছে? স্পন্দন ঠিকই আছে? বিশ্বাসের মূল্য তোমার দর্শনকে ঠিক করবেই একদিন।
কান্না আসে, চোখে জল আসে, অশ্রুসিক্ত চোখে এখনো বিছানায় যাই, ভাবতে ভাবতে এখনো ঘুমিয়ে পড়ি সুন্দর সকালের অপেক্ষায়। কিন্তু কি জানো? আমার সকাল সবসময়ই বিসাদের নিলীমার মতো আমার সাথে খেলা করে। সবটুকু তুমিই দিয়েছ আমি এটাও বিশ্বাস করি, আমি কৃতজ্ঞ, চির কৃতজ্ঞ। আমি বিনয়ী আমার বিশ্বাসের প্রতি, কারণ আমার বিশ্বাস-তো তোমারই কোন ভূল প্রবাদ ছিল।